জামিয়ার অতীত বর্তমান

জামিয়ার অতীত বর্তমান

   জামিয়ার অতীত ও বর্তমান

পৃথিবীর মানুষ যখন আল্লাহকে ভুলে পাপ-পঙ্কিলতার ভারে বিপর্যস্ত। তখন ইলমে ওহীর আলো নিয়ে পবিত্র মক্কায় আবির্ভূত হন শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি মানুষকে দ্বীনের পথে ফিরিয়ে আনার জন্য ইলমে ওহীর প্রচার কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করেন হযরত আরকাম রাযি. এর বাড়ি। ইসলামের ইতিহাসে বাড়িটি দারুল আরকাম নামে খ্যাত। এটি ইসলামী ইতিহাসে ইলমে ওহীর প্রথম মাদরাসা। মক্কার কাফেরদের অত্যাচারে বাধ্য হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরত করেন। তিনি সেখানে সর্বপ্রথম একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যার নাম মসজিদে ক্বোবা। অতঃপর আরও একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা আজ মসজিদে নববী নামে প্রসিদ্ধ। দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে মসজিদে নববীকে কেন্দ্র করে চালু করেন দ্বীনি ইলমের দরসগাহ্। এভাবে চারশত বছর পর্যন্ত দ্বীনি শিক্ষার চর্চা ছিল মসজিদভিত্তিক।

অতঃপর গজনীর সুলতান মাহমূদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘মাদ্রাসায়ে মাহমূদিয়া’। এরপর নিশাপুরের ‘মাদ্রাসায়ে মাহমূদিয়া’ বাগদাদের নিযামিয়া, মিশরের জামিউল আযহার, তিউনেসিয়ার জামিয়া কাইরুয়ান, স্পেনের জামিয়া কর্ডোভা ও ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দসহ খ্যাতনামা দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলো মসজিদ কেন্দ্রিক উক্ত শিক্ষা ব্যবস্থারই বিস্তৃত রূপ।

যখন এদেশের মুসলমানদের হৃদয় থেকে ইসলামকে চিরতরে উৎখাত করার শক্ত প্রচেষ্টা চলছিল, তখন সেই বিদেশী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নিমিত্তে যে সকল মহামনীষী ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ইলমে দ্বীনের মশাল প্রজ্জ্বলিত করেছিলেন, তাদের মধ্যে তৎকালীন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন হযরত মাওলানা ওবাইদুল হক নানুপুরী সাহেব রহ. ছিলেন অন্যতম। তিনি দেওবন্দী চিন্তাধারা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশে ইসলামের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানাস্থ নিজগ্রাম নানুপুরের কালু মুন্সিরহাটে বর্তমান বাইতুল আমান জামে মসজিদের উত্তর পার্শ্বে মাদ্রাসায়ে ‘হেমায়াতুল ইসলাম’ নামে দরসে নেজামীর সিলসিলাভুক্ত একটি মাদরাসা স্থাপন করেন এবং তিনি মাদরাসার  প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। 

মাদরাসা খুব দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। অল্প কিছু দিনের মধ্যে সত্যিকার জ্ঞান পিপাসু ত্বালিবে ইলমরা মাদ্রাসায় ভিড় জমায় এবং দ্বীনি ইলম অর্জন করতে থাকে। ছাত্ররা অত্র মাদরাসায় দরসে নেজামীর পাঠ্যক্রম অনুপাতে জামাতে চাহারুম পর্যন্ত শিক্ষালাভ করে ‘দারুল উলূম দেওবন্দ’ ও ‘দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী’ সহ অন্যান্য বড় জামিয়ায় গিয়ে অবশিষ্ট শিক্ষা সমাপ্ত করতো।

এভাবে চলতে থাকে মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম। তৎকালীন মাদ্রাসার অন্যান্য উস্তাযগণের মধ্যে ছিলেন, মাওলানা ওবাইদুল হক সাহেবের সুযোগ্য সন্তান হযরত মাওলানা জিয়াউল ইসলাম সাহেব রহ., হযরত মাও. মাহমূদুল ওলী সাহেব রহ. ও উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ ইসলামী বিদ্যাপীঠ দারুল উলূম দেওবন্দের ফাযিল ও পাকিস্তানের মুফতীয়ে আযম মাও. মুফতী শফী রহ.-এর বিশিষ্ট খলিফা মাইজভান্ডার নিবাসী হযরতুল আল্লাম মাও. আমীর উদ্দীন সাহেব রহ. প্রমুখ। তাঁরা সকলেই ছিলেন হযরত মাও. ওবাইদুল হক সাহেবের রুহানী সন্তান। ৮২ বৎসর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁরই সাহেবযাদা হযরত মাওলানা জিয়াউল ইসলাম সাহেব মাদরাসার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কিন্তু অল্প কিছুদিন পরে তিনিও ইহজগত ছেড়ে চলে যান  মহান প্রভুর দরবারে। তাঁর ইন্তেকালের পর মাদরাসা ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকে যেতে লাগল। তখন মাদ্রাসার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তার ছোট ভাই হযরত মাওলানা মাজহারুল ইসলাম সাহেব রহ. একপর্যায়ে মাদ্রাসার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায় ।

প্রিয় উস্তাদের হাতেগড়া মাদ্রাসা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় নতুন করে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেন তাঁরই বিশেষ ছাত্র হযরত মাওলানা আমীর উদ্দীন সাহেব রহ.। হযরত মাও. মাহমূদুল ওলী সাহেব রহ. ও স্থানীয় সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ মাদ্রাসার ভিত্তি স্থাপনের জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা খুঁজতে আরম্ভ করলেন। অনেক খোঁজাখুঁজি ও দীর্ঘ যাচাই বাছাইয়ের পর অবশেষে তৎকালীন সময়ের সেরা বুযুর্গ, জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা, কুতবুদ দাওয়াহ্ ওয়াল ইরশাদ মাওলানা মুফতী আজিজুল হক সাহেব রহ.-এর ইশারায় ও স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমান বিশেষ করে তৎকালীন অত্র অঞ্চলের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক জনাব আলহাজ্ব মাস্টার মুহা. ফজলুর রহমান সাহেবের আপ্রাণ সহযোগিতায় বর্তমান জামিয়ার পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত ঘেরাও করা এবাদতখানার যে স্থানটি রয়েছে, সেখানে মাদ্রাসার কার্যক্রম আরম্ভ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

প্রিয় উস্তাদের নামানুসারে মাদ্রাসায়ে “ওবাইদিয়া হাফিজুল উলুম” নামকরণ করেন। মহান রাব্বুল আলামীনের উপর ভরসা করে ২৯ শে শাওয়াল ১৩৭৭ হিজরী মোতাবেক ১৯৫৭ সাল, সোমবার মাদ্রাসায় লেখাপড়া আরম্ভ করা হয়। তখন ভূজপুরের ক্বারী হামেদ সাহেব রহ. ও তাঁদের সাথে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় বর্তমান জামিয়ার মসজিদের স্থানে নির্মাণ করা হয় লম্বা একটি বাঁশের ঘর। এভাবে চলতে থাকে মাদ্রাসা। পরে তাদের সাথে যোগদান করেন মাও. আবু সুফিয়ান সাহেব রহ. ও মাওলানা হাফেয জামাল উদ্দীন সাহেব রহ.। আর তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাদ্রাসা উন্নতির দিকে পর্যায়ক্রমে এগিয়ে যেতে থাকে। অত্র মাদ্রাসার সূচনালগ্নে যেসব ব্যক্তিবর্গ বিশেষভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের মধ্যে মরহুম ডা. আব্দুল মান্নান সাহেব, আলহাজ্ব আঃ সালাম সাহেব, জনাব শামসুল হুদা সওদাগর সাহেব, জনাব আলহাজ্ব আবুল কাশেম সওদাগর,  আলহাজ্ব বদিউল আলম সওদাগর ও জনাব আলহাজ্ব মুয়াজ্জেম হোসেন সওদাগর সাহেবের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাদের সেই অবদান আজও স্মৃতির পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। 

তারপর ১৩৭৯ হিজরীর ৬ ই শাওয়াল মাদ্রাসার বার্ষিক সভায় পটিয়ার হযরত মুফতী আজিজুল হক্ব সাহেব রহ. তাশরীফ আনেন। সেখানে তৎকালীন মাদ্রাসা পরিচালক আল্লামা আমীরুদ্দীন সাহেব রহ. হযরত মুফতী সাহেব রহ.-কে হযরত সুলতান আহমদ নানুপুরী রহ. এর ব্যাপারে অত্র মাদরাসার মুহতামিম নিযুক্ত করার আবেদন করলেন। তখন হযরত মুফতী সাহেব উত্তরে বলেছিলেন যে, সে তো অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে সম্পৃক্ত আছে, তাই তাকে সরাসরি এখানে আনা যাবে না। হ্যাঁ, ধর্মপুর থেকে বাবুনগর আসা-যাওয়ার পথে কিছু সময় দিতে পারবে।

অতঃপর ১৩৮০ হিজরী ১৫ই রমযান, মুফতী সাহেব রহ.- এর ইন্তেকালের ১ সপ্তাহ পূর্বে মাওলানা আমীরুদ্দীন সাহেব রহ. পটিয়া মাদরাসায় যান এবং রমযানের  পর হজ্বের সফরে যাওয়ার ইচ্ছা পেশ করতঃ পুনরায় হযরত  সোলতান আহমাদ নানুপুরী হুজুর রহ.-কে মাদরাসার পরিচালক হিসাবে চাইলেন, তখন হযরত মুফতী সাহেব রহ. উত্তরে বলেছিলেন যে,  সোলতানকে বলো, সে যদি কখনও বাবুনগর হতে পৃথক হয়, তবে যেন ওবাইদিয়ায় চলে আসে। সে সময়ের পরেও কিছুদিন অর্থাৎ হযরত নানুপুরী রহ. অত্র মাদ্রাসায় আগমনের পূর্ব পর্যন্ত হযরত মাওলানা আমীর উদ্দীন রহ. অত্র মাদ্রাসার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। এবং নানুপুরী রহ.-এর আগমনের পর তাঁকে সাদরে মহাপরিচালক হিসাবে গ্রহণ করে নেন। পরবর্তীতে যখন ১৩৯৩ হিজরীতে দাওরায়ে হাদীস সূচনা হয়, তখন থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি মুসলিম শরীফ দরসদানে রত ছিলেন। 


হযরত আল্লামা শাহ সুলতান আহমদ নানুপুরী সাহেব রহ. ৫ ই শাওয়াল ১৩৮০ হিজরীতে মুহতামিম হিসাবে নানুপুরে চলে আসেন। সে সময় মাদ্রাসার অবস্থা ছিল বড়ই নাজুক ও সংকটময়। শিক্ষাস্তর ছিল মাত্র কাফিয়া পর্যন্ত। উল্লেখ্য যে, নানুপুরী হুজুর যখন প্রথম বাবুনগর হতে নানুপুর আসেন তখন তাঁর নিকট হতে সরাসরি কাফিয়া কিতাবের দরস নিয়েছেন এমন একজন ব্যক্তি হচ্ছেন প্রবীণ আলেমে দ্বীন জামিয়া ওবাইদিয়ার সিনিয়র উস্তাদ মাওলানা ইউসুফ সাহেব (আমতলী) দা.বা.। মকতবসহ গোটা মাদ্রাসায় ছাত্র ছিল ১০০/১৫০ জন। শিক্ষক ছিল ৫/৬ জন । তারা হলেন হযরত মাওলানা আমীর উদ্দীন সাহেব রহ., হযরত মাহমূদুল ওলী রহ., হযরত মাওলানা আবু সুফিয়ান রহ., হযরত মাওলানা সুলাইমান রহ., ও হযরত ক্বারী আফছার আহমদ রহ. প্রমুখ । বোর্ডিং-এর অবস্থা ছিল খুবই দুর্বল। কোনো কোনো সময় সামান্য ডাল-ভাত পাওয়া যেত, আবার কখনও বা উপবাস থাকতে হতো।    

তাছাড়া ছিল না নিজস্ব কোনো মসজিদ, পুকুর, মাঠ ও দালান । হযরত নানুপুরী রহ. তখন ধর্মপুরস্থ নিজ বাড়ি থেকে হেঁটে মাদরাসায় আসা-যাওয়া করতেন। এ কারণে তাঁকে প্রতিদিন হাঁটতে হত প্রায় আট-দশ মাইল। হযরত কখনো সামান্য পান্তাভাত খেয়ে আসতেন। আবার কখনো উপবাসে কাটাতেন সারাদিন। কারণ আর্থিক অবস্থা ছিল নেহায়েত খারাপ। মাদ্রাসার ঘর দরজার কথা-তো বলাই বাহুল্য। কেবল মাত্র ২০-২৫ হাত লম্বা একটি কুঁড়ে ঘর ছিল, তাও আবার নড়বড়ে। উত্তর-দক্ষিণের বাতাসে নিত্য হেলেদুলে কোনমতে নিজের অস্তিত্ব বহাল রাখত । হঠাৎ একবার তুফান এলে সেটা একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। মাদ্রাসার শিক্ষক এবং ছাত্ররা মিলে অতিকষ্টে সেই স্থানে বানালেন একটি মাটির ঘর। বর্ষাকালে পানি ঢুকলে সেটাও নষ্ট হয়ে যায়। বারংবার মেরামত করতে হত । এমনি করে অতিকষ্টে কেটেছে এই প্রতিষ্ঠানের শৈশব।

হযরত  নানুুপুরী হুজুর রহ.-এর ইখলাস, কর্মদক্ষতা ও অস্বাভাবিক রূহানী শক্তির বদৌলতে ধীরে ধীরে সেই ক্ষুদ্র ওবাইদিয়া হাফেজুল উলূম মাদ্রাসা আজকের আরব আজমসহ সমগ্র বিশ্বের পরিচিত একটি নাম জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়ায় রূপান্তরিত হয়েছে। হযরত নানুপুরী রহ. শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাঁর জীবদ্দশায় ইন্তেকালের প্রায় ১৩ বৎসর পূর্বে, ১৪০৬ হি. মোতাবেক ১৯৮৪ সালের দিকে তদীয় বিশিষ্ট খলিফা, কালজয়ী সাধক, খতীবে ইসলাম, আল্লামা শাহ্ জমীরুদ্দীন রহ.-কে সুযোগ্য মুহতামিম ও পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত করেন। খতীবে ইসলাম আল্লামা শাহ্ জমীরুদ্দীন রহ. একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, আধ্যাত্মিক জগতের আলোকিত পুরুষ, হযরত নানুুপুরী রহ.-এর নিজ হাতে গড়া খাঁটি মানুষ ও হেদায়েতের পথ প্রদর্শক ছিলেন। হযরত নানুপুরী রহ. তাঁর মধ্যে অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা, ইলমী যোগ্যতা এবং ঈমানী দৃৃঢ়তা দেখে তাঁকে এই বিশাল জামিয়ার পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত করেন, তাঁর উপর দায়িত্বভার ন্যস্ত করে চিন্তামুক্ত হন।  ইন্তেকালের পূর্বে এক যুগেরও বেশি সময় স্বচক্ষে তাঁর নিখুঁত পরিচালনা দেখে, অতঃপর ১৩ রবিউল আখির ১৪১৮ হিজরী মোতাবেক ১৬ই আগস্ট ১৯৯৭ইং শনিবার, হযরত নানুপুরী হুজুর রহ. ইহকাল ত্যাগ করেন। 

তারপর থেকে হযরত শাহ জমীর উদ্দীন রহ. অত্যন্ত ত্যাগ-তিতিক্ষা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সহিত অত্র জামিয়ার মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন  করেছেন। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও সুদক্ষ পরিচালনায় অত্র জামিয়া উন্নতির এক শীর্ষ চূড়ায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। তাঁর পরিচালনাকালে জামিয়া ওবাইদিয়া অসাধারণ উন্নতি দেখেছে। জাহের-বাতেন, গুণগত ও রূপগত সার্বিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। যেমনি একাডেমিকভাবে জরুরি ও যুগোপযোগী শিক্ষার বিভিন্ন স্তর ও বিভাগ সম্পন্ন সুদক্ষ ও ব্যুৎপত্তিপূর্ণ শিক্ষকমন্ডলির সমাহার এবং আমলিয়্যাত ও রূহানীয়াতের অনন্য মারকাযে পরিণত হয়েছে, তেমনি উন্নতি সাধিত হয়েছে নির্মাণেও, চতুর্দিকে উঁচু উঁচু চূড়ার ন্যায় অট্টালিকাগুলোর বেষ্টনী, মধ্যখানে বিশাল মাঠ, সুউচ্চ তিনতলা বিশিষ্ট বিরাট মসজিদ, উত্তর ও পূর্বে আরও তিনটি ছোট মসজিদ, অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গেস্ট হাউস, চতুর্দিকে পাকাঘাট বিশিষ্ট পুকুর ও বিশাল আকৃতির সুদর্শন বাবুর্চিখানা। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ও জেনারেটর ব্যবস্থা। জামিয়ার এ বিশাল এলাকার প্রতিটি পয়েন্ট সর্বাধুনিক সি.সি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এক নিরাপদ পরিবেশ। সর্বদা হাজার হাজার তালিবে ইলমের “ক্ব-লাল্লাহ”ও ‘‘ক্ব-লার রাসূল’’-এর গুঞ্জন। সর্বোপরি স্নিগ্ধ-শীতল মনোমুগ্ধকর এক বেহেশতী পরিবেশ । এ যেন মহান আল্লাহ তাআলার দেওয়া এক অপূর্ব নেয়ামত। যা সত্যিই দর্শক এবং পর্যটকদের মন জুড়ায়।

                                                                    বর্তমান ভৌগোলিক অবস্থান
হাজারো ওলী-বুযুর্গ ও মহামনীষীর কদম মোবারকের ধূলিতে ধন্য এ স্থানের মাটি। এমন মহান আদর্শবান ব্যক্তিদের পবিত্র পরশেই যেন আবহমান কাল ধরে পাহাড় দেশ থেকে নেমে এসেছে অজস্র ঝরণার ফোয়ারা। চট্টগ্রাম শহরের ত্রিশ কি. মি. উত্তরের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ফটিকছড়ি থানার অন্তর্গত গ্রাম নানুপুর, তারই বুকের পবিত্র ভূমিতে বিশাল এলাকা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত দ্বীনি শিক্ষার সুদূরপ্রসারী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় “জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া”।  


বর্তমান জামিয়ার বহুমুখী শিক্ষার বিভিন্ন কার্যক্রম

 জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া উপমহাদেশের একটি প্রসিদ্ধ ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি আজ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সহ আর বিভিন্ন দেশে এর ব্যাপক সুখ্যাতি রয়েছে। অত্র প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাপ্রাপ্ত ওলামা সমাজ উল্লেখিত প্রভৃতি দেশে ইসলামের বহুমুখী ও ব্যাপক খিদমাত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। অত্র প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক স্তর থেকে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পর্যন্ত ইসলামী শিক্ষার পর তাফসীর, হাদীস, ফিকাহ, তাজবীদ ও আরবী সাহিত্য ইত্যাদিসহ যুগোপযোগী বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের আরো বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে।

এ প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি ছাত্রদেরকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কম্পিউটার, হস্তলিপি, টেইলারিং ও বই-পুস্তক বাইন্ডিংসহ বিভিন্ন হস্তশিল্প ও কারিগরি শিক্ষারও ব্যবস্থা রয়েছে।
এখানে অধ্যয়নরত ছাত্রদের বিনা বেতনে শিক্ষাদান এবং বাসস্থানের ব্যবস্থাসহ যাবতীয় পাঠ্যপুস্তক ফ্রি প্রদান করা হয়। বর্তমানে জামিয়ার ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৯০০০ (নয় হাজার) এবং উস্তাদ ও অন্যান্য কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১৮৫ (একশত পঁচাশি) জন।

 

arrow_upward