সাহিত্য-সাংস্কৃতি, দা’ওয়াত ও তারবিয়্যত এবং খেদমত সম্পর্কিত জামিয়ার বহুমুখী কার্যক্রম।

সাহিত্য-সাংস্কৃতি, দা’ওয়াত ও তারবিয়্যত এবং খেদমত সম্পর্কিত জামিয়ার বহুমুখী কার্যক্রম।

সাহিত্য-সাংস্কৃতি, দা’ওয়াত ও তারবিয়্যত এবং খেদমত সম্পর্কিত জামিয়ার বহুমুখী কার্যক্রম

ধারাবাহিক শিক্ষাক্রম ছাড়াও  জামিয়ার পক্ষ থেকে ছাত্রদের মেধা বিকাশের লক্ষ্যে, ছাত্রদের আদর্শ দ্বীনি সেবকরূপে গড়ে তোলার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। যার মধ্য হতে নিম্নে কিছু বর্ণিত হল।               

(১) ছাত্র পাঠাগার: সিলেবাসভুক্ত ধারাবাহিক শিক্ষাক্রমের পাশাপাশি ছাত্রদের বহুমুখী জ্ঞানার্জন ও জাতির সমকালীন  অবস্থা ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অবগতি লাভের জন্য বিভিন্ন বিষয়ের উপর তথ্যবহুল বহু পুস্তকসহ মাসিক, সাপ্তাহিক, দৈনিক পত্রিকা সমৃদ্ধ ‘‘সুলতানিয়া পাঠাগার’’ নামে একটি সমৃদ্ধশালী উন্মুক্ত পাঠাগার রয়েছে। শিক্ষানুরাগী ছাত্ররা ক্লাসিক্যাল পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে স্বীয় অভিরুচী মোতাবেক বই-পুস্তক সংগ্রহ করে যুগোপযোগী বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়। এই পাঠাগারের পক্ষ হতে প্রতি মাসে একটি করে শিক্ষা সেমিনারের আয়োজন করা হয়। ছাত্ররা উক্ত সেমিনারে শিক্ষক মহোদয়গণের উপস্থিতিতে বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রবন্ধ ও বক্তৃতা উপস্থাপন করে থাকে এবং উত্তীর্ণ ছাত্রদেরকে জামিয়া কর্তৃপক্ষ পুরস্কার প্রদান করে থাকেন। 

(২) আরবী ভাষা ও বক্তৃতাচর্চা বিভাগ: ছাত্রদের আরবী ভাষায় কথোপকথন, বক্তৃতা ও প্রবন্ধ রচনাসহ সর্বোপরি আরবী ভাষায় পাণ্ডিত্ব অর্জনের জন্য সুদক্ষ আরবী প্রভাষকমণ্ডলীর তত্ত্বাবধানে, ‘আন্নাদিল আদবিল আরাবী’ নামে একটি বিভাগ রয়েছে। এ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতি মাসে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছাত্ররা আরবীতে বিভিন্ন বিষয়ের উপর কথোপকথন, বক্তৃতা ও প্রবন্ধ পেশ করে থাকে।

(৩) কাব্যরচনা বিভাগ: ছাত্রদের কাব্য রচনায় উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন উপলক্ষ্যে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় ৪/৫ টি কাব্যানুষ্ঠান। এতে ছাত্ররা আরবী, উর্দূ, ফার্সী বাংলা ও ইংরেজীসহ বিভিন্ন ভাষায় কাব্য রচনা করে আবৃত্তি করে থাকে। 

(৪) ফতোয়া বিভাগ: এ বিভাগে ব্যাক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন অবস্থা ও পরিস্থিতিকে শরীয়তের দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করে যাবতীয় সমস্যার সঠিক ও সুষ্ঠ সমাধান দেয়া হয় এবং জনসাধারণের পেশকৃত মাসআলা-মাসায়িল সম্পর্কিত সব ধরনের জটিল প্রশ্নের বিশুদ্ধ উত্তর সরাসরি বা চিঠির মাধ্যমে প্রদান করা হয়।

(৫) ফারায়িয: এ বিভাগে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ওয়ারিশগণের মধ্যে শরিয়তের বিধান মোতাবেক সুষ্ঠ বন্টনের রুপরেখা বর্ণনা করা হয়।

(৬) দাওয়াত ও তাবলীগ বিভাগ: এ বিভাগের আওতায় ছাত্রদেরকে কুরআন-সুন্নাহর নিয়ম মোতাবেক যিন্দেগী গঠন ও জন সমাজে দ্বীনি দাওয়াত দানের বাস্তব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এই উপলক্ষ্যে তাবলীগী কার্যক্রম আঞ্জাম দেয়া হয়।  প্রতি ছুটিতে বিশেষ করে রমযানের দীর্ঘ ছুটিতে অসংখ্য ছাত্র তাবলীগী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে চিল্লা, সাল ও বিভিন্ন মেয়াদে সময় লাগানোর জন্য বের হয়। প্রত্যেক আছর নামাযের পর কিতাবী তা’লীম মাশওয়ারা, সাপ্তাহিক গাশ্ত ও শুক্রবার ২৪ ঘন্টা সময় লাগানোসহ যাবতীয় তাবলীগী কর্মসূচী পালন করা হয়। 

(৭) জমীরিয়া দাওয়াত সেন্টার বাংলাদেশ: এ সেন্টার সকল প্রকার শিরক, বিদআত, অপসংস্কৃতি ও ইসলামের বিরুদ্ধে বাতিল শক্তির যাবতীয় অপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে । দেশব্যাপী সকল মুসলামান বিশেষ করে ওলামা সমাজকে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করার বিশেষ ভূমিকা পালন করে । বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় রয়েছে তার শাখা। এবং জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া জামে মসজিদে এই সিলসিলায় প্রতি বৃহঃস্পতিবার নিয়মিতভাবে বাদে মাগরিব হতে ইসলাহী বয়ান, যিকির ও সবগোজারীর বিশেষ প্রোগ্রাম, আল্লামা শাহ্ ছালাহ উদ্দীন পীর সাহেব নানুপুর দা.বা.-এর বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত হয় । এতে নানুপুরের আশেকীন, জাকেরীন ভাইয়েরা এবং সর্বস্তরের অসংখ্য মুসল্লিদের সমাগম হয়ে থাকে। প্রতি বছর ঢাকা-রাজশাহী ও চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে অনুষ্ঠিত হয় এ সেন্টার কর্তৃক ইসলাহী মাহফিল। বিশেষ আয়োজনে অনুষ্ঠিত কয়েকদিনব্যাপী এ মাহফিলগুলোতে হয় হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিপুল সমাগম । 

(৮) নূরানী মুয়াল্লিম প্রশিক্ষণ বিভাগ: এ বিভাগ প্রতি বছর ‘‘বাংলাদেশ নূরানী মুয়াল্লিম প্রশিক্ষণ বোর্ড’’-এর সুদক্ষ শিক্ষক দ্বারা দেশের ফোরকানিয়া মাদ্রাসাগুলোর মুয়াল্লিমদেরকে, ছোট শিশুদের সহজরূপে শিক্ষাদানের নিয়ম পদ্ধতি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। এ ট্রেনিং প্রতি বছর ২৫ সাবান থেকে আরম্ভ হয়ে ১৬ রমযান ফাইনাল পরীক্ষা গ্রহণের পর শেষ হয়। ২১ দিন ব্যাপী এই ট্রেনিংয়ে অংশ গ্রহণ করার জন্য দেশের  বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত মুয়াল্লিম জামিয়ায় ভিড় জমান। তাদের থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ জামিয়া কর্তৃক ফ্রি ব্যবস্থা করা হয়। সেই সাথে প্রশিক্ষণ শেষে সনদ প্রদান করা হয়। এ বিভাগের তত্ত্বাবধানে দেশের বিভিন্ন জেলাতে মুয়াল্লিম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

(৯) সোলতানিয়া একাডেমী: চট্টগ্রাম-এর প্রবীণ বুযুর্গানে দ্বীন শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশের সন্ধানে শহর থেকে দূরে সরে গ্রাম অঞ্চলের ঝামেলা মুক্ত পরিবেশে বড় বড় জামিয়াগুলো প্রতিষ্ঠা করেছেন। ফলে শহরে বসবাসকারী দেশের অধিকাংশ বিত্তবান ও উচ্চ শ্রেণীর লোকেরা ধর্মীয় জ্ঞান ও উলামা মাশায়েখদের ছোহবত থেকে বঞ্চিত। আধুনিক ও ধর্মীয় শিক্ষায় সমন্বিত শিক্ষাঙ্গনের অভাবে শহরবাসী শিশুরা ধর্র্মহীন কে.জি স্কুলে শিক্ষা লাভ করে নাস্তিক, ধর্মহারা ও আলিম ওলামা  বিদ্বেষী হয়ে গড়ে উঠছে। তাই জামিয়ার দূূর্দশী ও স্বনামধন্য মহা পরিচালক আল্লামা জমীর উদ্দীন সাহেব রহ. অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরী চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র নাছিরাবাদ ২নং গেইট সংলগ্ন চশমা পাহাড় এলাকায় ২৪ কাটা জায়গার উপর প্রতিষ্ঠা করেছেন “সোলতানিয়া একাডেমী ” নামে একটি বহুমুখী ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ।
    এতে বর্তমানে রয়েছে আধুনিক ও ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বিত নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত কিন্ডার গার্ডেন ও হিফয বিভাগ। ভবিষ্যতে উচ্চতর ইসলামী বিভাগ, আরবী সাহিত্য বিভাগ ও তাজবীদ বিভাগসহ আরো বহুমুখী কর্মসূচী গ্রহণের উদ্যোগ হাতে রয়েছে। একাডেমীর তিন তলা বিশিষ্ট একটি ভবন ছাড়াও বর্তমানে দশ কোটি টাকা ব্যয়ে দশতলা বিশিষ্ট একটি বিশাল ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। উক্ত ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় নির্মিত হয়েছে সুপ্রশস্ত একটি জামে মসজিদ। প্রতি ইংরেজি মাসের প্রথম শনিবার বাদ আছর হতে একাডেমী প্রাঙ্গনে ইসলাহী জোড় ও দুআ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে খতীবে ইসলাম আল্লামা শাহ্ জমীর উদ্দীন রহ.-এর সুযোগ্য ছাহেবযাদা ও জানশীন আল্লামা শাহ্ ছালাহ উদ্দীন পীর সাহেব নানুপুরী দা.বা. বয়ান করেন।

(১০) জমীরিয়া তা’লিম ও তাযকিয়া পরিষদ: মুসলিম সমাজে কুরআন ও সুন্নাহের বিশুদ্ধ আক্বীদা ও মৌলিক ধর্মীয় জ্ঞান প্রচারের লক্ষ্যে, সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিশ^বরেণ্য ব্যক্তিত্ব আধ্যাত্মিক রাহবার উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুযুর্গ, কুতুবুল আলম আল্লামা শাহ্ জমির উদ্দীন রহ. ৮/৭/২০১০ ঈসায়ী তারিখে ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি দক্ষ ও বিজ্ঞ কমিটির সমন্বয়ে ‘জমিরিয়া তা‘লিম ও তাযকিয়া পরিষদ বাংলাদেশ’ নামে একটি শিক্ষাবোর্ড গঠন করেন। এটি সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত দ্বীনি শিক্ষা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে উক্ত বোর্ডের অধীনে বাংলাদেশে অন্তত ৮০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থাতেও এ বোর্ডটি অধিনস্থ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে  সদা তৎপর। এ সাফল্যকে আরও বেগবান করতে কেদ্রীয় বোর্ডের অধীনে বিভিন্ন জেলা ভিত্তিক আঞ্চলিক বোর্ড-কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত কমিটির মাধ্যমে অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানসমূহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ লেখা-পড়ার তদারকীসহ সঠিক বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়।

arrow_upward